আগের দিন নিয়ে ছন্দ
আগের দিনে হাসি ছিলো, ছিলো কত গান,
সেই দিনগুলো আজ কেবল স্মৃতিরই পত্রখান।
আগের দিন নিয়ে ছন্দ
আগের দিনের ছোঁয়া ছিলো হৃদয়েরই গভীরে,
আজ সে দিনে ফিরে যাই কল্পনায় নিঃশব্দ ধীরে।
হারানো দিনের গল্প শুনি নীরব রাতে বসে,
মন বলে, “ফিরে যাবো”, সময় শুধু হাসে।
আগের দিনে ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ ভীষণ,
এখনকার প্রেম শুধুই রঙিন অভিনয় প্রবণ।
সেই আগের দিনের বিকেল, সেই চায়ের কাপ,
এখন সবই শুধু স্মৃতি, কেবল ফাঁকা চাপ।
আগের দিনে বন্ধু ছিলো, ছিলো বুক ভরা গান,
এখনকার দিনে শুধু মোবাইল আর নির্জনতা খান।
সেই পুকুরঘাট, সেই খেলা, সেই আম গাছ তলায়,
আজ সে স্মৃতি জাগে শুধু একাকী রাতের ছায়ায়।
আগের দিনে চোখে চোখ, কথায় মধুর ছোঁয়া,
আজ সে চোখে নেই আলো, নেই সম্পর্কের মোহনা।
আগের দিনের পাতা খুঁজে পাই না সেই লেখা,
জীবন আজ কেবল দৌড়, নেই আর মনের দেখা।
শৈশবের মাঠ, কাদামাটি, খেলার ছুটি ছুটি,
আগের দিনের আনন্দটা এখন কত দূরভূতি!
আগের দিনে চিঠি আসতো হাতে লেখা ছেঁড়া,
এখন কেবল ইনবক্স, মনের ভেতর ফাঁকা ঘেরা।
বৃষ্টি এলে মনে পড়ে আগের দিনের ছাতা,
এক ছাতায় দু'জনে ভিজতাম—ছিলো ভালোবাসার কথা।
আগের দিনে দুঃখও ছিলো একরকম মধুর,
এখনকার দুঃখ শুধু একলা মনকেই করে ভীতুর।
পুরনো ছবির ফ্রেমে বন্দী আগের দিনের আলো,
আজও সেই মুখগুলো দেখি, আজও মনটা ভালো।
আগের দিনে চাঁদের আলো পড়ত মাঠের কোণে,
এখন শুধু জানালা দিয়ে তাকাই সেভাবেই গোপনে।
আগের দিনে বইয়ের পাতা খুললেই গল্প হতো,
এখন সবই মোবাইলে, আবেগগুলোও খাটো।
ভোরবেলা উঠেই ছুটতাম স্কুলের পথে হেঁটে,
আজ সে রাস্তায় শুধু ঝরা পাতা, একাকী বয়ে বটে।
আগের দিনের বন্ধুত্ব ছিল হৃদয়েরই বাঁধনে,
এখন দেখি নাম তালিকা, কারো মনে কারো না মনে।
মায়ের হাতের রান্না ছিলো আগের দিনের সুখ,
আজ ডেলিভারির প্যাকেট হাতে মন করে কষ্ট মুখ।
আগের দিনের সরলতা ছিলো অমূল্য রতন,
আজ সে দিন নেই পাশে, আছে শুধু স্মৃতির মন।
আগের দিনে হাসি ছিল, দুঃখেও ছিল গান,
আজ সে হাসি খুঁজে ফিরি, নীরব রাত-দিন জান।
স্মৃতির খাতায় লেখা আছে আগের দিনের গল্প,
আজ সে দিন স্বপ্ন হয়ে ঘুরে ফিরে কল্প।
আগের দিনে বৃষ্টিতে ভিজেছি মনের খেয়ালে,
এখন কেবল জানালা দিয়ে দেখি একলা কুয়াশায়।
বন্ধুরা ছিল পাশে, গল্পে ভরা সন্ধ্যা,
এখন সময় ব্যস্ত শুধু, নেই আর সেই বন্ধন-পথ।
গ্রামের পথে হেঁটে যেতাম, পায়ে লেগে কাদা,
আজ শহরের ধোঁয়ায় ভরা জীবনে নেই সে সাধা।
আগের দিনে মা বলতেন, “বৃষ্টি এলে চুপ করো”,
আজ আমি শুধু জানালায়, স্মৃতির কথা খুঁজি তো।
আকাশে ছিল তারা, হাতে ছিল হাত,
আজ সেই তারা দূরের, হাতে শুধু রাত।
আগের দিনে খেলতে খেলতে ভুলতাম সময়,
এখন ঘড়ির কাঁটা চায় শুধু কর্মযোগের কয়।
বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকান, সেই সন্ধ্যার মজা,
আজ সবাই ব্যস্ত, কে কার খবর রাখে বুঝা?
সেই খালি মাঠ, সেই শালিক ডাকা বিকেল,
সব হারিয়ে গেছি আজ, স্মৃতিরাই একমাত্র সঙ্গীেল।
আগের দিনে পত্র লিখতাম, কষ্টের বর্ণনা,
এখন ইমোজিতে হয় শেষ আবেগের চিন্তাধারা।
বৃষ্টির দিনে কাকভেজা, ছাতা ছুঁয়ে প্রেম,
আজকের দিনে প্রেমও যেন লাইক-কমেন্টে ফ্রেম।
আগের দিনে দুঃখও ছিলো একরকম মধুর,
এখনকার কষ্ট মানেই বিষাদে ভরপুর।
চুপিচুপি কথা বলতাম কলোনির কোনায়,
আজ নেই সে কোনা, শুধু স্মৃতি মনে সঞ্চয়।
শৈশবের খেলনা ছিলো, বাঁশির সুরে গান,
আজও কানে বাজে সুর, চোখে জমে প্রাণ।
গ্রামের মেলা, তালপাখা, পুকুরের ঝিল,
সেই দিনগুলো আজ কেবল মনেই রয়ে গেল।
স্কুল ব্যাগে বইয়ের গন্ধ, মা’র আদর ভোরে,
আজ অফিসের ডায়েরি পাতা, শুধুই চাপ আর ঘোরে।
তালগাছের ছায়ায় বসে গুনতাম নীল মেঘ,
এখন চার দেয়ালের মাঝে খুঁজি খোলা পথ।
বন্ধুদের সাথে হেঁটে যাওয়া পুরনো সেই রাস্তায়,
আজ হেঁটে গেলে শুধু দেখি স্মৃতিরই প্রহরায়।
শুক্রবারে ঘুরতে যেতাম নদীর পারে হেঁটে,
আজ আর যাওয়া হয় না, সময় কাটে ব্যস্ত বেটে।
আগের দিনে ঈদের চাঁদ মানেই নতুন শাড়ি,
আজকের দিনে মোবাইলে শুধু ছবি আর ভারী।
বাড়ির ছাদে বসে তারা গোনা, শীতের রাত,
সেই দিন আজ হারিয়ে গেছে, মনে পড়ে বারবার।
পিঠে বাঁশের ব্যাগ নিয়ে স্কুল যেতাম পথে,
আজকের বাচ্চা দেখে না সে মাটির সে রথে।
গভীর রাতে গল্প চলতো চুপিচুপি ফোনে,
আজ তো শুধু ইনবক্স ভর্তি, মনের ভিতর শূন্য কোণে।
আগের দিনের পাখির ডাক জাগাতো সকাল,
এখন আলার্ম বাজে মোবাইলে, নেই সেই ভালোকাল।
পুকুরঘাটে বসে থাকতাম, জলে ফেলতাম পাথর,
আজ সেই ঘাটও নেই, শুধু সময়ের ভিতর প্রহর।
সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতাম স্কুল ফাঁকি দিয়ে,
এখন অফিসে দেরি মানেই বকা পড়ে পেয়ে।
ছোটবেলায় ঠাকুরমার ঝুলির গল্পে ঘুম আসতো,
আজ ঘুম আসে না, স্মৃতি চোখে ভাসতো।
পাড়ার খেলায় হারলে কাঁদতাম প্রাণ ভরে,
আজ জীবনের খেলায় হারেও হাসি ধরে।
আগের দিনে সন্ধ্যে মানেই হারিকেনের আলো,
আজ লোডশেডিং মানেই বিরক্তিতে গলা ভাঙলো।
ঘুড়ি উড়াতাম ছাদে বসে, আকাশ যেন ছিল বন্ধু,
আজ সেই আকাশও ঢেকে গেছে ইট-কাঠের কুন্ডু।
টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দে গান গাইতাম মন খুলে,
আজ ছাদে উঠে দেখিই না আকাশ কত দূরে দুলে।
কাঠের চৌকিতে দাদুর সাথে গল্পের ছিল রাত,
আজ বিছানা বড়, কিন্তু মনে পড়ে সেই কথার পাত।
ছোট্ট পায়ে হেঁটে যেতাম স্কুলের পথ ধরে,
আজ বড় হয়ে গাড়ি চড়েও নেই আগের স্বরে।
দুপুরে খেলার পর মায়ের হাতে ভাত,
সেই স্বাদ কি আর মেলে আজকের ফাস্টফুড রাত?
গ্রামের মাঠে ধানগাছের গন্ধে ঘুম আসত ঠান্ডা,
আজ তো শুধু এসির বাতাসে শরীর যায় চাঁদা।
রেডিওতে ভেসে আসতো প্রিয় পুরনো গান,
আজ হাজার চ্যানেলেও খুঁজে পাই না প্রাণ।
টিফিনে ভাগাভাগি করতাম ভালোবাসা দিয়ে,
আজ খাবার বেশি হলেও কেউ ভাগ নেয় না নিয়ে।
আগের দিনে চিঠি পেতাম মন ছুঁয়ে যেতো,
এখন ইনবক্সে হাজার টেক্সট, অনুভব কোথায় লেপ্টো?
প্রেমের শুরু হয়তো ছিলো কাগজের এক চিঠিতে,
আজ প্রেম শুরু হয় রিঅ্যাক্ট দিয়ে স্যোশাল সাইটে।
দাদা-দিদার গল্প শুনে রাত করতাম জাগা,
আজ গল্প শোনায় নেটফ্লিক্স, নেই সেই প্রাণভরা লগ্ন।
জোছনায় বসে গান গাইতাম পুকুর পাড়ে চুপচাপ,
আজ ফোনে প্লেলিস্ট বাজে, কিন্তু মন চায় মেলাপ।
পাড়ার ঈদ মানেই খুশি, রঙিন জামার বাহার,
আজকার ঈদে ছবি হয়, হৃদয়ে নেই সেই ঝলকার।
এক টাকার আইসক্রিম খেতে ছিল আনন্দ,
আজ লাখ টাকায়ও খুশি নেই, সব যেন বন্দ।
ছোটবেলার বৃষ্টিতে নাচ, কাদা মাখা পা,
আজ বৃষ্টি মানেই ছাতা খোঁজা, জীবনের ব্যস্ততা।
স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখা, গোপন সব প্ল্যান,
আজ সময়ই নেই নিজের সাথে একটুখানি প্রাণ।
দুপুরে দাদুর হাঁটায় ছিল গল্পের ভেলা,
আজ হাঁটি একা রাস্তায়, স্মৃতিরা খেলে খেলা।
পুরনো ছবি দেখলে চোখে আসে জল,
আগের দিনের মানুষগুলোই ছিল আপন সবপল।
বন্ধুর জন্মদিন মানেই চকলেটের খুশি,
এখন শুধু উইশ পাঠিয়ে দায় সারা দুঃখভুষি।
আগের দিনের সুখ ছিলো ছোট ছোট বাঁধনে,
আজ বড় বড় স্বপ্নেও খুঁজি সে আগুন-শীতল বাঁশনে।
এম এ এস ওয়ার্ড স্টোরি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url