পিরিয়ডের সময় নাপা খেলে কি হয় - পিরিয়ড ব্যথা কমানোর জন্য বৈজ্ঞানিক ও ভেষজ উপায়

 পিরিয়ডের সময় (ঋতুস্রাবকালে) নাপা (Napa = Paracetamol/Acetaminophen) খাওয়া সাধারণভাবে নিরাপদ বলে ধরা হয়।



পিরিয়ডের সময় নাপা খেলে কি হয় - পিরিয়ড ব্যথা কমানোর জন্য বৈজ্ঞানিক ও ভেষজ উপায়

নাপা (Paracetamol) কী করে?

নাপা মূলত ব্যথা ও জ্বর কমাতে ব্যবহৃত হয়।

পিরিয়ডের সময় পেটের ব্যথা (cramps), কোমর ব্যথা বা মাথাব্যথা হলে এটি সাময়িক আরাম দিতে পারে।

পিরিয়ডের সময় নাপা খেলে যা হতে পারে:

সুবিধা

পেটের ক্র্যাম্প, কোমর ব্যথা, মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

হালকা থেকে মাঝারি ব্যথায় কার্যকর।

সতর্কতা

নাপা সাধারণত রক্তপাত (bleeding) বাড়ায় না বা ঋতুস্রাবে কোনও ক্ষতি করে না।

তবে অতিরিক্ত খেলে (প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে ৪ গ্রামের বেশি/প্রায় ৮টা 500mg ট্যাবলেট) লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

যাদের আগে থেকেই লিভারের সমস্যা, অতিরিক্ত মদ্যপান বা হেপাটাইটিস আছে, তাদের সতর্ক থাকতে হবে।

বিকল্প আরও কার্যকর ওষুধ

অনেক সময় ডাক্তাররা ঋতুকালের তীব্র ব্যথার জন্য NSAID গ্রুপের ওষুধ দেন, যেমন:

Mefenamic Acid (Ponstan)

Ibuprofen (Brufen, Nurofen, Fenbid ইত্যাদি)

এসব ওষুধ পিরিয়ড ক্র্যাম্পে Paracetamol এর চেয়ে বেশি কার্যকর। তবে কারো যদি গ্যাস্ট্রিক/আলসার/কিডনি সমস্যা থাকে তাহলে সতর্ক থাকতে হবে।

পিরিয়ডের সময় নাপা খাওয়া নিরাপদ।

ব্যথা খুব বেশি হলে ডাক্তাররা সাধারণত Mefenamic Acid বা Ibuprofen লিখে দেন।

অতিরিক্ত ওষুধ না খেয়ে, গরম পানির ব্যাগ পেটে রাখা, হালকা ব্যায়াম বা ভেষজ চা (আদা/দারুচিনি) খেলেও অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।

পিরিয়ড ব্যথা কমানোর জন্য বৈজ্ঞানিক ও ভেষজ উপায়

অবশ্যই । পিরিয়ডের সময় ব্যথা (Dysmenorrhea) অনেক নারীর জন্য কষ্টদায়ক। এটি কমানোর জন্য দুটি দিক থেকে উপায় আছে—

১) বৈজ্ঞানিক/আধুনিক চিকিৎসা (ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি)

২) ভেষজ ও ঘরোয়া উপায়

বৈজ্ঞানিক (আধুনিক চিকিৎসা) উপায়

সাধারণ ব্যথা কমানোর ওষুধ

Paracetamol (Napa, Ace, etc.) – হালকা ব্যথায় কার্যকর।

NSAIDs (Non-Steroidal Anti-inflammatory Drugs)

Mefenamic Acid (Ponstan, Mefnil) .

Ibuprofen (Brufen, Fenbid, Nurofen) .

Naproxen .

এগুলো ব্যথা কমায় এবং জরায়ুর অতিরিক্ত সংকোচনও নিয়ন্ত্রণ করে।

হরমোনাল চিকিৎসা (ডাক্তারের পরামর্শে)

Combined Oral Contraceptives (পিল) – মাসিক নিয়মিত করে ও ব্যথা কমায়।

Hormonal IUD (Mirena ইত্যাদি) – দীর্ঘমেয়াদে ব্যথা ও রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে।

অন্য সহায়ক চিকিৎসা

গরম পানির ব্যাগ/Heating pad পেটে রাখা।

হালকা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং।

পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো।

ভেষজ ও ঘরোয়া উপায়

ভেষজ পানীয়/খাবার

আদা চা – প্রদাহ কমায়, ব্যথা উপশম করে।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি – জরায়ুর প্রদাহ ও সংকোচন কমায়।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় – ফলে ব্যথা ও ক্র্যাম্প কম হয়।

পেট ফাঁপা, বমি ভাব ও ক্লান্তি কমায়।

শরীর গরম রাখে – ঠান্ডাজনিত অস্বস্তি দূর করে।

দিনে ২–৩ বার আদা চা খেলে পিরিয়ড ব্যথা ও অস্বস্তি অনেকটাই কমে যায়।খালি পেটে না খাওয়াই ভালো, হালকা খাবারের পরে খেলে আরামদায়ক।যাদের গ্যাস্ট্রিক/অ্যাসিডিটি সমস্যা আছে, তারা বেশি আদা না খাওয়াই ভালো।ব্লাড থিনার (যেমন Aspirin, Warfarin) খেলে অতিরিক্ত আদা এড়িয়ে চলতে হবে।

দারুচিনি চা 

জরায়ুর সংকোচন কমায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।প্রদাহ কমায়  জরায়ুর অতিরিক্ত সংকোচন হ্রাস করে।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়  পেটের ব্যথা ও ক্র্যাম্প কমায়।গরম রাখে শরীরকে  ঠান্ডাজনিত অস্বস্তি ও কাঁপুনি দূর করে।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল  শরীরকে সতেজ ও সংক্রমণমুক্ত রাখে।

দিনে ২ বার (সকাল ও বিকেলে) খেলে পিরিয়ড ব্যথা ও ক্লান্তি অনেকটা কমে যায়।যাদের লো ব্লাড সুগার (Hypoglycemia) সমস্যা আছে, তারা সাবধানে খাবেন, কারণ দারুচিনি রক্তে শর্করা কমাতে পারে। তিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় (দিনে ২ কাপের বেশি নয়)।

তুলসীপাতার চা

 ব্যথা ও মানসিক চাপ কমায়।তুলসীপাতার চা (Tulsi Tea) আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসায় খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে পিরিয়ড ব্যথা, মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দূর করতে তুলসী চা অনেক কার্যকর।

প্রদাহ কমায় জরায়ুর অতিরিক্ত সংকোচন হ্রাস করে, পিরিয়ড ব্যথা কমে।স্ট্রেস ও টেনশন কমায়  হরমোন ব্যালেন্সে সাহায্য করে।ইমিউনিটি বাড়ায়  সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  শরীরকে সতেজ রাখে, ক্লান্তি কমায়।

শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা, কাশি কমায়  পিরিয়ডের সময় দুর্বলতা বা ঠান্ডা লাগলে উপকার মেলে।দিনে ১–২ বার খাওয়া নিরাপদ ও কার্যকর।গর্ভবতী মায়েরা তুলসীপাতা বেশি না খাওয়াই ভালো।

মেথি ভিজানো পানি 

 পিরিয়ড ব্যথা ও ফাঁপাভাব কমায়।মেথি ভিজানো পানি (Fenugreek water) পিরিয়ড ব্যথা কমানোর জন্য দারুণ একটি ভেষজ উপায়। অনেকেই এটাকে "ন্যাচারাল পেইন রিলিভার" বলেন।প্রদাহ কমায়  জরায়ুর ক্র্যাম্প (পেট ব্যথা) হালকা হয়।

হরমোন ব্যালান্স করে  পিরিয়ড চলাকালে মুড সুইং ও টেনশন কমায়।ফাঁপাভাব ও গ্যাস কমায়  পেটের অস্বস্তি হ্রাস করে।রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়  ব্যথা কমে ও শরীর হালকা লাগে।

সাধারণত দিনে ১ বার (সকালে খালি পেটে) খাওয়া যথেষ্ট।পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২–৩ দিন আগে থেকে খাওয়া শুরু করলে ব্যথা আরও কম হয়।অতিরিক্ত মেথি খেলে ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীরা সতর্ক থাকবেন, কারণ মেথি ব্লাড সুগার কমাতে পারে।গর্ভবতী অবস্থায় মেথি পানি না খাওয়াই ভালো।

হলুদ দুধ (Turmeric milk) 

প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি।হলুদ দুধ (Turmeric Milk / Golden Milk) পিরিয়ডের সময় ব্যথা ও অস্বস্তি কমানোর জন্য বহুল পরিচিত একটি ভেষজ পানীয়।অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহ কমায়)  জরায়ুর সংকোচন কমিয়ে ব্যথা হালকা করে।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় পেট ব্যথা ও ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি দেয়।ইমিউনিটি বাড়ায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

শরীর গরম রাখে  ঠান্ডাজনিত অস্বস্তি ও ক্লান্তি দূর করে।ঘুম ভালো আনে পিরিয়ড চলাকালে অস্থিরতা ও স্ট্রেস কমায়।রাতে ঘুমানোর আগে ১ কাপ খেলে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

পিরিয়ড ব্যথার সময় প্রতিদিন ১ বার যথেষ্ট।যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তারা গরুর দুধের পরিবর্তে বাদাম দুধ/সয়া দুধ ব্যবহার করতে পারেন।

অতিরিক্ত হলুদ খেলে কারও কারও অ্যাসিডিটি বা ডায়রিয়া হতে পারে।যাদের গলস্টোন বা গলব্লাডারের সমস্যা আছে, তারা সাবধানে খাবেন।

ঘরোয়া উপায়

গরম পানির ভাপ 

কোমর ও পেটে আরাম দেয়।গরম পানির ভাপ (Steam / Hot compress) পিরিয়ড ব্যথা কমানোর জন্য একটি খুবই কার্যকর ঘরোয়া উপায়।গরম পানি ভরে কোমর বা পেটে ১৫–২০ মিনিট ধরে রাখুন।দিনে ২–৩ বার করলে ব্যথা কমে যাবে।তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে পেটে বা কোমরে রাখুন।

কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা হলে আবার গরম করে নিন।পিরিয়ড ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।রাতে ঘুমানোর আগে করলে আরামদায়ক ঘুম আসবে।খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করবেন না, পোড়ার ঝুঁকি আছে।যাদের ত্বকের সংবেদনশীলতা বেশি বা ত্বকে ক্ষত আছে তারা সাবধানে ব্যবহার করবেন।

লেবু-মধু পানি 

শরীরের ক্লান্তি ও দুর্বলতা কমায়।লেবু-মধু পানি (Lemon Honey Water) পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের ক্লান্তি, দুর্বলতা ও অবসাদ কমাতে খুব কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায়।মধু প্রাকৃতিক গ্লুকোজ সরবরাহ করে, দুর্বলতা কমে।লেবু শরীরকে সতেজ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।রক্তক্ষরণের সময় পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে।হালকা ও সতেজ পানীয় হিসেবে আরাম দেয়।হরমোনাল ইফেক্টের কারণে আসা অস্থিরতা কিছুটা হ্রাস করে।

তিলের তেল দিয়ে হালকা মালিশ

 রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, পেটের ব্যথা কমায়।জরায়ুর আশেপাশে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়, ব্যথা কমে।হালকা গরম করে নিন ১–২ চা চামচ তিলের তেল।নাভির নিচে ও কোমরের দুপাশে হালকা হাতে ৫–১০ মিনিট মালিশ করুন।পিরিয়ড ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।কারও যদি ত্বকে অ্যালার্জি থাকে তবে আগে সামান্য অংশে লাগিয়ে দেখে নিন।

পানি ও তরল বেশি পান করা 

পানি ও তরল বেশি পান করা পিরিয়ডের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ব্যথা কমাতে অন্যতম সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া উপায়।রক্তক্ষরণের সময় শরীরে পানিশূন্যতা কমে না।অতিরিক্ত পানি খেলে শরীরের লবণ ও টক্সিন বের হয়ে যায়।গরম পানি ব্যথা কমাতে সহায়ক।অতিরিক্ত লবণযুক্ত পানীয় বা খাবারও ফাঁপাভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।

খাওয়া-দাওয়ার দিক থেকে

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার (ডাল, পালং শাক, কলিজা, খেজুর) – রক্তের ঘাটতি রোধ করে।

ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (বাদাম, কলা, কুমড়ার বীজ) – পেশির খিঁচুনি কমায়।

ক্যাফেইন, অতিরিক্ত লবণ ও জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা ভালো।

দ্রুত কার্যকরী টিপস

ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই NSAID (Ponstan/Ibuprofen) খেলে বেশি কাজ করে।

গরম পানির ব্যাগ ব্যবহার করলে সাথে সাথে আরাম পাওয়া যায়।

প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করলে দীর্ঘমেয়াদে পিরিয়ড ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।

সংক্ষেপে

হালকা ব্যথায় → নাপা/ভেষজ উপায় যথেষ্ট।

মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায় → Ponstan বা Ibuprofen বেশি কার্যকর।

বারবার তীব্র ব্যথা হলে → গাইনোকলজিস্ট দেখানো জরুরি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম এ এস ওয়ার্ড স্টোরি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪