ওমিপ্রাজল কীভাবে কাজ করে

 ওমিপ্রাজল (Omeprazole) একটি জনপ্রিয় ওষুধ, যা প্রধানত পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (Proton Pump Inhibitor - PPI) নামক ওষুধ শ্রেণীর অন্তর্গত। নিচে ওমিপ্রাজল কী কাজ করে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) তৈরি হয় একধরনের এনজাইম বা প্রোটিনের মাধ্যমে, যাকে বলে “প্রোটন পাম্প”। এই প্রোটন পাম্পকে বাধা দিয়ে ওমিপ্রাজল পেটে অ্যাসিড তৈরি হওয়া বেশ কমিয়ে দেয়, ফলে অ্যাসিড-সম্পর্কিত অসুখগুলোর উপসর্গ কমে যায়।



ওমিপ্রাজল কীভাবে কাজ করে

ওমিপ্রাজলের কাজ / ব্যবহারের ক্ষেত্র

গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric Ulcer) পাকস্থলীর ভিতরের দেয়ালে ঘা হলে তা গ্যাস্ট্রিক আলসার নামে পরিচিত। ওমিপ্রাজল এই ঘা শুকাতে সাহায্য করে এবং নতুন ঘা হওয়া ঠেকায়।

ডিওডেনাল আলসার (Duodenal Ulcer) ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে তৈরি হওয়া ঘা নিরাময়ে ওমিপ্রাজল কার্যকর। এটি প্রায়ই হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে মিলে কাজ করে।

গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এটি এমন এক অবস্থা যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালির দিকে ফিরে আসে, ফলে বুকজ্বালা, ঢেকুর, অম্বল, গলা জ্বালা ইত্যাদি হয়। ওমিপ্রাজল অ্যাসিড কমিয়ে এই সমস্যাগুলো কমায়।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও অম্বল খাবার হজমের পর পেটে অস্বস্তি বা বেশি অ্যাসিডের কারণে হওয়া অম্বল উপশমে এটি ব্যবহৃত হয়।

জোলিঙ্গার-এলিসন সিনড্রোম (Zollinger-Ellison Syndrome) এটি একটি বিরল রোগ, যেখানে পাকস্থলীতে অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়। ওমিপ্রাজল এ রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যকর।

অ্যাসিড-পেপটিক ডিজঅর্ডার প্রতিরোধে যারা নিয়মিত ব্যথানাশক (NSAIDs) খাচ্ছেন, তাদের অ্যাসিড-জনিত ক্ষতি থেকে পাকস্থলীর সুরক্ষায় ওমিপ্রাজল ব্যবহৃত হয়।

কখন ও কীভাবে খাওয়া উচিত?

খালি পেটে সকালে খাবারের অন্তত ৩০-৬০ মিনিট আগে খাওয়া উচিত।

দিনে একবার বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে দুইবার খাওয়া যেতে পারে।

ওমিপ্রাজলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects)

ওমিপ্রাজল (Omeprazole) এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects) সাধারণত মৃদু ও সাময়িক হয়ে থাকে, তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কিছু গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

এগুলো বেশিরভাগ সময় নিজে থেকেই কমে যায়:

মাথাব্যথা (Headache)

বমি ভাব বা বমি (Nausea or Vomiting)

পেট ফাঁপা বা গ্যাস (Flatulence)

পেট ব্যথা বা অস্বস্তি (Abdominal pain)

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা (Diarrhea)

কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation)

মুখ শুকিয়ে যাওয়া (Dry mouth)

অবসাদ ও দুর্বলতা (Tiredness or fatigue)

অল্প হলেও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে বা কিছু ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে:

ভিটামিন B12 এর ঘাটতি

দীর্ঘদিন ওমিপ্রাজল খেলে B12 শোষণ কমে যেতে পারে, ফলে ক্লান্তি, স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।

ম্যাগনেশিয়াম-এর ঘাটতি (Hypomagnesemia)

দুর্বলতা, খিঁচুনি, হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস

দীর্ঘমেয়াদে ক্যালসিয়াম শোষণ কমে হাড় দুর্বল হতে পারে।

কিডনির সমস্যা (Chronic Kidney Disease)

খুব দীর্ঘদিন ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে কিডনি ফাংশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

লিভার এনজাইমের মাত্রা বেড়ে যাওয়া

বিরল হলেও দেখা দিতে পারে।

অ্যালার্জি বা রিঅ্যাকশন (Skin rash, itching, swelling)

কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক ইনফেকশন (Clostridium difficile)

পাকস্থলীর অ্যাসিড কমে গেলে কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সহজে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত

তীব্র পেট ব্যথা

কালো বা রক্তমিশ্রিত পায়খানা

শ্বাসকষ্ট, মুখ-ঠোঁট-জিহ্বা ফুলে যাওয়া

ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি

অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা খিঁচুনি

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম এ এস ওয়ার্ড স্টোরি এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪